ভূমিকা
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের আন্দোলনের নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে এই আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি, রূপরেখা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করব।
আন্দোলনের পটভূমি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। তাদের মূল দাবি হলো সরকারের পদত্যাগ এবং একটি ন্যায্য ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে একটি বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নিচ্ছে এবং আজ থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন তারই ধারাবাহিকতা।
অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা
অসহযোগ আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন। নিম্নলিখিত ১৫টি নির্দেশনা ঘোষণা করা হয়:
- কোনো ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান নয়:
- সকল ধরনের ট্যাক্স ও খাজনা প্রদানে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
- ইউটিলিটি বিল পরিশোধ বন্ধ:
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
- প্রতিষ্ঠান ও কারখানা বন্ধ:
- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত এবং কল কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মচারীরা অফিসে না গিয়ে মাস শেষে বেতন তুলবেন।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ:
- সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
- রেমিট্যান্স বন্ধ:
- প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাতে নিষেধ করা হয়েছে।
- সরকারি সভা-সেমিনার বর্জন:
- সকল সরকারি সভা, সেমিনার এবং আয়োজনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- বন্দর বন্ধ:
- বন্দর কর্মীদের কাজে যোগ না দিতে এবং কোনো পণ্য খালাস না করতে বলা হয়েছে।
- কারখানা বন্ধ:
- সকল কলকারখানা বন্ধ থাকবে এবং গার্মেন্ট কর্মীরা কাজে যাবেন না।
- গণপরিবহন বন্ধ:
- সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকবে এবং শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন না।
- ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত:
- জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি রবিবার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।
- পুলিশের দায়িত্ব সীমিত:
- পুলিশ শুধুমাত্র রুটিন ডিউটি করবে এবং প্রটোকল, রায়ট বা প্রটেস্ট ডিউটিতে অংশ নেবে না।
- অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ:
- সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
- সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সীমিত:
- বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না।
- আমলাদের কার্যালয়ে না যাওয়া:
- সচিবালয় ও উপজেলা কার্যালয়ে আমলারা যাবেন না।
- বিলাস দ্রব্যের দোকান ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ:
- বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
জরুরি সেবা ও দোকানপাট
অসহযোগ আন্দোলনের সময় জরুরি সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট খোলা থাকবে:
- জরুরি সেবা: হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহন সেবা।
- নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
সম্ভাব্য প্রভাব
অর্থনৈতিক প্রভাব: অসহযোগ আন্দোলনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ট্যাক্স ও বিল পরিশোধ বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস পাবে। প্রবাসী আয় বন্ধ থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থানও কমে যাবে।
সামাজিক প্রভাব: আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে, জরুরি সেবা চালু থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।
রাজনৈতিক প্রভাব: সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে।
উপসংহার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগ এবং ন্যায্যতার দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এর প্রভাব ও ফলাফল নির্ভর করবে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির সফলতা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়ার উপর। আমাদের আশা, এই আন্দোলন বাংলাদেশে একটি ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।