আল্লাহ পাক বলেন:
“নিঃসন্দেহে যারা তাদের প্রভুকে অদৃশ্যভাবে (না দেখেই) ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রাপ্য পুরস্কার।” (সুরা আল-মূলক, আয়াত-১২)।
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সেইসব মুমিনদের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা তাঁকে অদৃশ্যভাবে (যখন আল্লাহকে তারা দেখতে পায় না) ভয় করে। এটি নির্দেশ করে যে প্রকৃত ঈমানদাররাই তাদের জীবন পরিচালনা করে এমনভাবে, যেন তারা সবসময় আল্লাহর নজরে আছে, যদিও তারা আল্লাহকে দেখতে পায় না। এমন ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা এবং বিশাল প্রতিদান (অর্থাৎ জান্নাত) প্রস্তুত রেখেছেন।
“অদৃশ্যভাবে ভয়” – এর অর্থ:
“অদৃশ্যভাবে” বলতে বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহকে সরাসরি দেখতে না পেলেও তাঁর প্রতি গভীর ভীতি ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা। মুমিনগণ সর্বদা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তাদের সব কিছু দেখছেন এবং জানেন। এ কারণে তারা খাঁটি অন্তর নিয়ে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে।
এই ভয় কেমন হওয়া উচিত:
কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে” (সূরা ফাতির, আয়াত ২৮)। যারা আল্লাহর গুণাবলি, ক্ষমতা ও তাঁর প্রশস্ত সৃষ্টি সম্পর্কে জানে, তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এই ভয় তাদের জীবন পরিচালনার মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একজন মুমিন যখন গোপনে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষের সামনে বিনম্রভাবে জীবন যাপন করে, তার জন্য আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও বরকত দান করেন” (সহীহ মুসলিম)।
ক্ষমা ও মহাপ্রাপ্য পুরস্কার:
এখানে “ক্ষমা” এবং “মহাপ্রাপ্য পুরস্কার” বলে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ সেইসব মুমিনদের সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন যারা তাঁকে সত্যিকারের ভয় করে। আর এই পুরস্কার হলো জান্নাত, যেখানে তাদের জন্য অসীম শান্তি এবং অনন্ত সুখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, “তারা জান্নাতে থাকবে, যেখানে তাদের যা কিছু ইচ্ছা করবে তা তারা পাবে এবং তাদের জন্য রয়েছে আরও অধিক” (সূরা কাফ, আয়াত ৩৫)।
আল্লাহ আরও বলেন, “তোমরা যদি এমন কেউ হও যে, আল্লাহকে ভয় করে এবং পরকালের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩৩)।
সূরা আল-মূলক-এর এই আয়াতে আল্লাহ এমন মুমিনদের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও করুণা প্রদর্শন করেছেন যারা তাঁকে অন্তর দিয়ে ভয় করে। এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহকে না দেখে ভয় করা এবং তাঁর আদেশ অনুসরণ করা ঈমানের অন্যতম লক্ষণ। যারা এমন অন্তর নিয়ে জীবন কাটায়, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন এবং তাঁদের জন্য জান্নাতে মহাপ্রাপ্য পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।