বাংলাদেশে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতি বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ফাউন্ডেশন মূলত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, যা সমাজে কোনো বিশেষ সেবা প্রদান বা সমাজ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। এখানে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো:
১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ:
প্রথমে, আপনার ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কী ধরনের সমাজসেবা প্রদান করবেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। যেমন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ সচেতনতা ইত্যাদি।
২. ফাউন্ডেশনের নাম ঠিক করা:
ফাউন্ডেশনের জন্য একটি নাম ঠিক করতে হবে। নামটি এমন হতে হবে যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে না। নাম ঠিক করার সময় নিশ্চিত হয়ে নিন যে, সেটি অনন্য এবং আকর্ষণীয়।
৩. মেমোরান্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MOA) এবং আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন (AOA) প্রণয়ন:
ফাউন্ডেশনের জন্য মেমোরান্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MOA) এবং আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন (AOA) তৈরি করতে হবে। এই দুটি নথিতে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, পরিচালনার নিয়মাবলি, এবং সদস্যদের দায়িত্ব উল্লেখ থাকে।
৪. ট্রাস্টি বোর্ড গঠন:
ফাউন্ডেশন পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে। সাধারণত ৩ থেকে ২১ জন সদস্য নিয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ট্রাস্টি বোর্ড ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং এর নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
৫. রেজিস্ট্রেশন:
বাংলাদেশে ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশনের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এর মধ্যে সাধারণভাবে ফাউন্ডেশনগুলো রেজিস্টার হয় সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মসের রেজিস্টার অফিসে। ফাউন্ডেশনের জন্য কোন আইন প্রযোজ্য হবে তা নির্ভর করে ফাউন্ডেশনের কাঠামো ও উদ্দেশ্যের উপর।
ক. সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন (NGO):
যদি ফাউন্ডেশনটি অলাভজনক এবং সমাজসেবার জন্য হয়, তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়ে ফি প্রদান করতে হবে।
খ. জয়েন্ট স্টক কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে (Company Limited by Guarantee):
যদি ফাউন্ডেশনটি গ্যারান্টি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করা হয়, তবে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির অফিসে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। MOA, AOA, ট্রাস্টি বোর্ডের তালিকা, ফি জমা ইত্যাদি নথি প্রয়োজন হবে।
৬. ব্যাংক একাউন্ট খোলা:
ফাউন্ডেশনের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, যার মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হবে। সাধারণত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন সনদ, ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়।
৭. আর্থিক উৎস এবং ফান্ড সংগ্রহ:
ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থের উৎস নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিগত অনুদান, সরকারি অনুদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের থেকে সহায়তা বা দাতব্য কাজের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৮. ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু:
রেজিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। নিয়মিত কাজের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
উপসংহার:
ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে সঠিকভাবে এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে, আপনি বাংলাদেশে একটি সফল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন, যা সমাজের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।