বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম: ভাবনা ও বাস্তবতা

activities-anti-discrimination-student-movement

০৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নেতাদের বর্তমান কার্যক্রম এবং তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। আন্দোলনের প্রাথমিক সফলতার পর বর্তমানে তাদের ভূমিকা ও কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হাসিনার অপরাধের দায় ও নেতাদের বর্তমান অবস্থান

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করছেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম অনেকের কাছে অস্পষ্ট। সাধারণ মানুষের ধারণা, তারা হাসিনা সরকারের অপরাধ এবং ব্যর্থতার দায় নিজেরা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা দেশের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অকার্যকর করে দিয়েছেন। ব্যাপক দলীয়করণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র নেতারা তাদের রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন না।

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রশ্ন

বর্তমানে ছাত্র নেতাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এই মুহূর্তে এটি কি সঠিক পদক্ষেপ? সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে এবং নেতাদের নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং যদি এটি আরও অবনতি ঘটে, তাহলে এর দায় ছাত্র নেতাদের উপরই পড়বে।

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন কার্যত অকার্যকর অবস্থায় আছে, আর এর প্রভাব রাস্তা-ঘাটে দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কোন নিয়ম মানতে চাইছে না, এবং পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহস পাচ্ছে না। ছাত্র নেতাদের উচিত এখনই দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ এবং প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করা।

প্রাইভেট ভার্সিটি খোলা, সরকারি ভার্সিটি বন্ধ: শিক্ষার অগ্রগতি

বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু হয়েছে, কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও বন্ধ। এ অবস্থায় ছাত্র নেতাদের উচিত দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রাস্ট্রেশন এবং হতাশা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

vccbd

পিএসসি পুনর্গঠন এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল চাকরিতে বৈষম্য দূর করা, কিন্তু বর্তমানে পিএসসি কার্যত অচল। চাকরির নিয়োগ বন্ধ এবং নতুন সার্কুলার আসছে না। বেকারত্বের হার বাড়ছে এবং শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্র নেতাদের উচিত পিএসসি পুনর্গঠনের জন্য চাপ সৃষ্টি করা এবং দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ: জনগণের আস্থা বজায় রাখা

এই মুহূর্তে ছাত্র নেতাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের আস্থা ধরে রাখা এবং দেশকে শৃঙ্খলার পথে ফেরানো। তারা যদি এই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারে, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য জনগণ তাদের সমর্থন দেবে। অন্যথায়, তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে যাবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

উপসংহার

বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র নেতাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্থগিত রেখে দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা উচিত। জনগণ তাদের উপর যে আস্থা রেখেছে, তা ধরে রেখে কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।