ওলি আল্লাহর পরিচয় প্রসঙ্গে

oli- allahr-porichoy

কোন একজন মানুষ কি অন্য একজন মানুষকে ওলি আল্লাহ বলে প্রচার করার অধিকার আছে?

কোনো মানুষ অন্য একজন মানুষকে ওলি আল্লাহ বলে প্রচার করার অধিকার ইসলামে অনুমোদিত নয়। একজন ব্যক্তি ওলি আল্লাহ কি না, তা নিশ্চিতভাবে জানার অধিকার কেবল আল্লাহরই রয়েছে। এটি কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন দলিল থেকে প্রমাণিত।

১. ওলি আল্লাহর পরিচয় ও সংজ্ঞা

কুরআনে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন:

“জেনে রাখো! আল্লাহর ওলিদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারা এমন লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে।”

(সূরা ইউনুস: ১০:৬২-৬৩)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়:

• ওলি আল্লাহ হওয়ার শর্ত হলো ঈমান এবং তাকওয়া।

• এটি আধ্যাত্মিক ও গোপন বিষয়, যা কেবল আল্লাহ জানেন।

২. মানুষের সীমাবদ্ধতা ও আল্লাহর বিশেষাধিকার।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:

“তোমরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা করো না। তিনিই ভালো জানেন কে বেশি তাকওয়াবান।”

(সূরা আন-নাজম: ৫৩:৩২)

এখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, কেউ কারো ঈমান বা তাকওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারে না। কারণ আল্লাহই জানেন কারা প্রকৃতপক্ষে তাকওয়াবান বা ওলি।

vccbd

৩. হাদীসের আলোকে ওলিত্বের বিষয়টি গোপনীয়।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:

“আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন, যারা আড়ালে থাকেন। তাদের সম্পর্কে কেউ জানে না, এমনকি নিজেরাও জানে না যে তারা আল্লাহর কাছে কত প্রিয়।”

(মুসনাদে আহমাদ: ২/৩০১, হাদীস নম্বর: ৯৪৮০)

এই হাদীস প্রমাণ করে যে প্রকৃত ওলিদের পরিচয় সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যদি এমন হয়, তাহলে তাদের প্রচার করারও সুযোগ থাকে না।

৪. যদি কেউ অন্যকে ওলি আল্লাহ বলে প্রচার করে, তবে তার ফলাফল কী?

ক. ভুল বিচার হওয়ার সম্ভাবনা:

কেউ যদি অন্যকে ওলি আল্লাহ বলে প্রচার করে, তবে তার বিচার সঠিক না-ও হতে পারে। কারণ, তাকওয়া এবং ওলিত্ব একটি আধ্যাত্মিক গুণ, যা বাহ্যিক আচরণ বা কর্ম দ্বারা পুরোপুরি বিচার করা সম্ভব নয়।

খ. অহংকার বা ফিতনার সৃষ্টি:

কোনো ব্যক্তিকে ওলি আল্লাহ বলে ঘোষণা করলে তা তাকে অহংকারী করতে পারে বা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি স্পষ্টতই ইসলামের বিনয়বোধের পরিপন্থী।

গ. বিদআত বা ভুল প্রথার প্রচলন:

কারো ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেওয়া ইসলামে বিদআত (নতুন প্রথা) হিসেবে গণ্য হতে পারে। কারণ, রাসূল (সা:) এবং সাহাবারা (রা:) কখনো কাউকে “ওলি” হিসেবে প্রচার করেননি।

৫. ইসলামিক স্কলারদের মতামত:

ইসলামী স্কলাররা এ বিষয়ে সর্বসম্মত যে:

• ওলি আল্লাহ কারা, তা নির্ধারণের ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই।

• একজন ব্যক্তিকে ওলি আল্লাহ বলা বা প্রচার করা, যদি আল্লাহর নির্দেশ বা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া হয়, তবে তা গর্হিত কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

৬. দলিলভিত্তিক বিশ্লেষণ।

কুরআনের দলিল:

“তোমার প্রভু যা চান, তাই সৃষ্টি করেন এবং যাকে চান, মর্যাদা দেন। তারা যা পছন্দ করে, তা তাদের হাতে নেই।”

(সূরা কাসাস: ২৮:৬৮)

হাদীসের দলিল:

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন:

“আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক দিক বা সম্পদ দেখে বিচার করেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর এবং আমল দেখেন।”

(সহীহ মুসলিম: ২৫৬৪)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, কারো ওলিত্ব বিচার করার ক্ষমতা মানুষের নেই, কারণ মানুষের অন্তরের অবস্থার জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে রয়েছে।

৭. উপসংহার

কেউ যদি অন্যকে ওলি আল্লাহ বলে প্রচার করে, তাহলে তা ইসলামের মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ:

1. ওলিত্ব একটি গোপন ও আধ্যাত্মিক বিষয়, যা কেবল আল্লাহ জানেন।

2. নিজে কাউকে ওলি ঘোষণা করা মানুষের সীমাবদ্ধতার বাইরে।

3. এটি বিভ্রান্তি, অহংকার এবং ভুল প্রচারণার সৃষ্টি করতে পারে।

সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি:

• কোনো ব্যক্তি যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর ওলি হন, তবে তার কাজ ও আচরণে তা প্রকাশ পাবে।

• মুসলমানদের উচিত অন্যের ইবাদত, তাকওয়া ও সৎ কাজ দেখে সম্মান করা, তবে “ওলি আল্লাহ” বলে প্রচার না করা।