“লাওহে মাহফুজ” (اللوح المحفوظ) শব্দটির অর্থ “সংরক্ষিত ফলক”। এটি দ্বারা বোঝায় এমন একটি ফলক বা বোর্ড যেখানে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির সকল কার্যক্রম ও ঘটনা, ভাগ্য বা তকদির লিখে রেখেছেন। লাওহে মাহফুজে সকল কিছু সংরক্ষিত থাকে এবং এখানে যা লেখা রয়েছে, তা অবশ্যম্ভাবীভাবে ঘটবে।
কুরআনে আল্লাহ লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। সূরা আল-বুরুজে আল্লাহ বলেন:
بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَّجِيدٌ فِي لَوْحٍ مَّحْفُوظٍ
“বরং এটি একটি মহিমান্বিত কুরআন, যা সংরক্ষিত ফলকে (লাওহে মাহফুজে) আছে।”
(সূরা আল-বুরুজ: ২১-২২)
এখানে বোঝানো হয়েছে যে কুরআনের বাণী এবং আল্লাহর বিধানগুলো এই লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত রয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।
হাদিসের আলোকে লাওহে মাহফুজ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ আসমান-জমিন, মানুষের জন্ম, মৃত্যু, এবং সবকিছুর ফয়সালা এই লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির ৫০,০০০ বছর পূর্বে সৃষ্টির তকদির নির্ধারণ করেছেন এবং তা লাওহে মাহফুজে লিখিত রয়েছে।”
(মুসলিম, হাদিস: ৬৭৪৮)
লাওহে মাহফুজের বৈশিষ্ট্য
১. পরিবর্তনহীন: লাওহে মাহফুজে যা লেখা রয়েছে, তা পরিবর্তন করা যায় না। আল্লাহর ইচ্ছা এবং কুদরত অনুযায়ী এখানে সবকিছু নির্ধারিত।
২. অদৃশ্য: এটি মানুষের জন্য অদৃশ্য এবং শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন এতে কি আছে।
৩. সর্বজ্ঞান: এখানে সমস্ত কিছুর জ্ঞান সংরক্ষিত। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ—সবকিছুর বিশদ বিবরণ এতে আছে।
লাওহে মাহফুজের সাথে তকদির (ভাগ্য) ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য তকদির নির্ধারণ করে রেখেছেন। এবং এই তকদির লাওহে মাহফুজে লেখা রয়েছে। তবে আল্লাহ আমাদের ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা সৎকর্ম করতে বা পাপকর্ম থেকে বিরত থাকতে পারি, কিন্তু চূড়ান্ত ঘটনাগুলি আল্লাহর অনুমোদন ও ইচ্ছায় ঘটে থাকে।
লাওহে মাহফুজ হলো আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছার প্রকাশভূমি। লাওহে মাহফুজে যা লেখা রয়েছে, তাতে সংশয় নেই এবং তা পরিবর্তনও করা যায় না। এটি বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আল্লাহর সর্বজ্ঞানের প্রতি আমাদের আস্থা ও নির্ভরতা জাগায় এবং আমাদেরকে আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্য মেনে নিতে অনুপ্রাণিত করে।