ইসলামে মিলাদ বা সম্মিলিত দোয়ার শেষে শিরনি বা তাবারক বিতরণ প্রসঙ্গে।

ইসলামে মিলাদ বা সম্মিলিত দোয়ার শেষে শিরনি বা তাবারক বিতরণের ব্যাপারে বিশেষ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবে এটি কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কুরআন ও হাদীসে সরাসরি মিলাদ শেষে শিরনি বিতরণের বিধান নেই, তবে তাবারক বা খাদ্য বিতরণের বিষয়ে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ইসলামিক ফিকহ এবং সাহাবাগণের আমলের আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হলে বেশ কিছু বৈধতা এবং শর্ত প্রযোজ্য হয়।

১. কুরআনের আলোকে:

কুরআনে মিলাদ বা দোয়ার শেষে তাবারক বিতরণের কথা সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে মানুষকে সাহায্য করা, অতিথিপরায়ণতা এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ বলেন: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য খাবার বিতরণ করো।” (সূরা দাহর, আয়াত: ৮-৯)। এটি সাধারণভাবে দান এবং মানুষকে খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহ দেয়। মিলাদ বা সম্মিলিত দোয়ার মতো উপলক্ষ্যগুলোতে খাদ্য বিতরণের ক্ষেত্রে যদি উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি, তবে তা সওয়াবের কাজ হতে পারে।

২. হাদীসের আলোকে:

হাদীসে বিভিন্ন উৎসব বা আনন্দের সময় খাবার বিতরণের উদাহরণ পাওয়া যায়। তবে, মিলাদ উপলক্ষে নির্দিষ্টভাবে তাবারক বা শিরনি বিতরণের কোনো বিধান সরাসরি উল্লেখ নেই। একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “তোমরা একে অপরকে খাদ্য খাওয়াও এবং সালাম দাও; তাহলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (সহীহ মুসলিম: ২০৪৭)। এই হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, সাধারণ দান-খয়রাত এবং খাবার বিতরণের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত দোয়ার পরবর্তী খাদ্য বিতরণও, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে হয়, তবে এর মধ্যে কোনো বাধা নেই।

৩. সাহাবাদের আমলের দৃষ্টিকোণ:

সাহাবাগণ সাধারণত বিভিন্ন উপলক্ষে দান ও খাদ্য বিতরণ করতেন। তবে, বিশেষভাবে মিলাদ বা সম্মিলিত দোয়ার পরে তাবারক বিতরণ করার উদাহরণ সাহাবাদের মধ্যে দেখা যায় না। তাবারক বা খাবার বিতরণের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এটি করা হলে তা বৈধ হতে পারে।

vccbd

মিলাদ উপলক্ষে সাহাবাদের আমল:

মিলাদ উদযাপন সাহাবাগণ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করেননি, তবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর জীবনের ঘটনাবলি ও গুণাবলির স্মরণ সবসময় ছিল। খাদ্য বিতরণের বিশেষ কর্মপদ্ধতি সাহাবাদের সময়ে মিলাদ শেষে অনুসৃত হয়নি, তবে ধর্মীয় উপলক্ষে খাবার বিতরণ তারা প্রাসঙ্গিক ও ভালো কাজ হিসেবে করেছেন।

৪. ইসলামিক পণ্ডিতদের দৃষ্টিভঙ্গি:

অনেক ইসলামিক পণ্ডিত মনে করেন, মিলাদ উপলক্ষে শিরনি বা তাবারক বিতরণ করা যদি সামাজিক ও ঐতিহ্যগতভাবে গৃহীত হয় এবং এতে কোন শিরক বা বিদআতের মিশ্রণ না থাকে, তবে এটি নিষিদ্ধ নয়। উদাহরণস্বরূপ, মাকরূহ নয় এমন ভালো উদ্দেশ্যে খাবার বিতরণ করা বৈধ এবং সহানুভূতির আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে, এটি ফরজ বা সুন্নাত নয়। হানাফি, মালিকি ও শাফি মাজহাবের পণ্ডিতদের একটি বড় অংশের মতে, কোনো উৎসবের ভিত্তিতে খাদ্য বিতরণ বৈধ, তবে তা ধারাবাহিকভাবে এবং ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা হিসেবে না করা উচিত।

ইসলামে মিলাদ শেষে শিরনি বা তাবারক বিতরণ বৈধ যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মানবকল্যাণের জন্য হয় এবং কোনো ধরনের বিদআত বা শিরকের মিশ্রণ না থাকে। এটি এমন এক প্রথা যা ঐতিহ্যের অংশ হতে পারে, তবে ইসলামের ফরজ বা সুন্নাত হিসেবে দেখা উচিত নয়।